উখিয়ার ফার্মেসিতে সরকারি ঔষধের ছড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক •

উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে অশিক্ষিত, প্রশিক্ষণহীন ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়াই গড়ে উঠেছে ঔষধ ফার্মেসী বিক্রি করা হচ্ছে সরকারি ঔষধ। এর মধ্যে উপজেলার কুতুপালং বাজারে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে কমদামে সরকারি ঔষধ বিক্রি করে অবৈধভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে হক মেডিকো।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে মালিক ও কর্মচারীরাই ডাক্তারী করছে। ফলে সরকার হাজার হাজার টাকার রাজস্ব্য আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর প্রতারিত হচ্ছে অসহায় সাধারণ মানুষ।

কুতুপালং বাজারের হক মেডিকো দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে প্রতারিত করে আসছে। সরকারি ওষুধগুলোর মোড়কে মূ্ল্য উল্লেখ নেই। তবে বেসরকারি ওষুধের সঙ্গে গ্রুপ মিলিয়ে দাম নির্ধারণ করে এগুলো ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
নিম্ন মানের ঔষধ বিক্রি করে বেশি লাভের মাধ্যমে সাধারণ জনগনের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এরই ফার্মেসীর মালিক উপজেলার কুতুপালং পশ্চিম পাড়া গ্রামের মাহমুদুল হক।

সরজমিনে দেখা যায়, ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ফার্মেসী দিয়ে বসে পড়েছেন।

এই লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসীতে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। হাতুড়ে ডাক্তারদের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ। এ ফার্মেসীতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চ মাত্রার, নিষিদ্ধ বড়ি, ও নিম্ন মানের নানা প্রকার ঔষধ বিক্রি করছে অবাধে। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে অনেক রোগী ও তাদের পরিবার-পরিজন। ফলে এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। ইচ্ছামত দাম লিখে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা য়ায়, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি থেকে বাকিতে ঔষধ ক্রয়-বিক্রয় সুযোগ থাকায় অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসা গড়ে তোলেছে হক মেডিকো।

অভিযোগ রয়েছে, এ ফার্মেসীর অধিকাংশই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে ঔষধ সরবরাহ দিয়ে থাকেন এবং রোগীদের বলে থাকেন একই গ্রুপের ঔষুধ ডাক্তার যেটা লিখেছেন তার চেয়েও ভালো। ফলে রোগীরা সরল বিশ্বাসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা যায়, একজন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট দ্বারা একটি ফার্মেসী পরিচালনা করতে হবে। ঔষধ বিক্রয় ও প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকে অবশ্যই প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে হবে। যদি কেউ ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিষ্ট প্রশিক্ষন ছাড়াই ঔষধ বিক্রি করে তাহলে ১৯৪২ ও ১৯৪৫ সালের ড্রাগ লাইসেন্স আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে।

কিন্তু উখিয়া উপজেলার কুতুপালং বাজারের হক মেডিকো তা মানছে না। এ এলাকার মানুষ অত্যন্ত গরীব। সংসারে আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস ঔষধের পেছনে চলে যাচ্ছে।

কুতুপালং বাজারে ভেজাল ও মানহীন ঔষধের দৌরাত্বে মানুষের জীবন বিপন্নে আশংকার মধ্যে পড়েছে। মানুষের জীবন যেমন সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে তেমনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিও হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ, মানহীন-ভেজাল ঔষধ বিক্রি করেই জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে রোহিঙ্গারাও।

কুতুপালং আরএমটু’র সভাপতি ডা. জহির জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারি ঔষধ বিক্রি করছে। স্থানীয় ও রোহিঙ্গারা ড্রাগ লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া দোকান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঐসব দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার করার পাশাপাশি সিলগালা দেওয়া প্রয়োজন।

এবিষয়ে উখিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন জানান, আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি উখিয়ার অধিকাংশ ফার্মেসিতে কোনো ড্রাগ লাইসেন্স নেই। সরকারি লোগো লাগানো যেকোনো ধরনের ঔষধ দোকানে বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

লাইসেন্স ছাড়া ফার্মেসী প্রতিষ্ঠান কিভাবে গড়ে তোলা হয় এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা অবৈধ। তবে আমি সিভিল সার্জন স্যারের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেব।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামুদ্দিন আহমেদ জানান, ‘নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এসব দোকানে অভিযান চালানো হবে। যেসব ফার্মেসিতে সরকারি ঔষধ পাওয়া যাবে এবং ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে ফার্মেসী গড়ে তোলা হলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’